সরকারি শত কোটি টাকার জমি আত্মসাত: অনুসন্ধানে দুদক

ডেক্স রিপোর্ট
  • Update Time : Wednesday, February 17, 2021
  • 463 Time View

চট্টগ্রামের সাবেক আরডিসি-এনডিসি ও সংঘবদ্ধ একটি চক্রের বিরুদ্ধে শত কোটি টাকার সরকারি জমি আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে। একইভাবে চট্টগ্রাম জেলার রেজিস্ট্রেশন কর্মকর্তা, জেলা সমবায় অফিসার ও জেলা প্রশাসনের সাবেক এক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট’র বিরুদ্ধেও উঠেছে ক্ষমতার অপব্যবহার ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগ।
অভিযোগ, ১৯৭৯ সালে ‘কল্লোল গৃহ নির্মাণ সমবায় সমিতি লিমিটেড’ নামে একটি সংগঠনকে বন্দোবস্তি দেয়া ৩ দশমিক ৩৭ একর খাস জমি নিজেদের নামে দলিল করে নিয়েছেন তৎকালীন আরডিসি-এনডিসিসহ সংশ্লিষ্ট ভূমিদস্যু চক্র। বর্তমানে এ জমি নানা কায়দায় ভূয়া কাগজপত্র তৈরি করে দখলে রেখেছেন জনৈক জুনাব আলী ও চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক দিদারুল আলমসহ প্রভাবশালী একটি চক্র। সমিতিকে বন্দোবস্তি দেয়া জমির দখল সমিতিকে বুঝিয়ে দিতে জেলা প্রশাসন একাধিকবার উদ্যোগ নিলেও নগরের বায়েজিদ বোস্তামি বাংলাবাজার এলাকার জুনাব আলী ও তার সহযোগিদের কারণে বার বার ভেস্তে যায়। কল্লোল গৃহ নির্মাণ সমবায় সমিতি লিমিটেড সদস্যরা হলেন-সরকারি ও আধাসরকারি কর্মকর্তা কর্মচারী। বিষয়টি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নিতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন কল্লোল গৃহ নির্মাণ সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি মো. বাদশা মিয়া। বিষয়টির তদন্ত করা হবে বলে জানিয়েছেন দুদক, চট্টগ্রাম জেলা কার্যালয়ের উপ পরিচালক লুৎফুল কবীর চন্দন।

দুদকে দায়ের করা অভিযোগে বলা হয়, ১৯৭৯ সালে কলে¬াল গৃহনির্মাণ সমবায় সমিতি লিমিটেড সরকারি জমি স্থায়ী বন্দোবস্তি পেতে ভূমি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করে। এর প্রেক্ষিতে সংগঠনটিকে চট্টগ্রাম মহানগরের পূর্ব নাসিরাবাদ মৌজার বিএস ২৭৩ নং প্লটের ৩ দশমিক ৩৭ একর কৃষি জমি স্থায়ী বন্দোবস্তি দেয় ভূমি মন্ত্রণালয়। সমিতির নামে দলিল সম্পাদনের নির্দেশ দেয়া হলেও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তৎকালীন আরডিসি মোহাম্মদ এয়াকুব আলী ও এনডিসি মোহাম্মদ আবুল হোসেন এবং সমিতির তৎকালীন সেক্রেটারী একেএম কবির উদ্দিন আহমেদ গোপন আঁতাতের মাধ্যমে ২৮ জন ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে চট্টগ্রাম সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে বন্দোবস্তি দলিল (৭৪৪৩) সম্পাদন করেন।
অভিযোগে বলা হয়, সমিতির সদস্য না হয়েও তৎকালীন আরডিসি মোহাম্মদ এয়াকুব আলী ও এনডিসি মোহাম্মদ আবুল হোসেনসহ আরও চার ব্যক্তির নামেও অবৈধভাবে দলিলটি সম্পাদন করা হয়। চক্রটি সরকারি এ সম্পত্তি আত্মসাতের উদ্দ্যেশ্যে একাধিক ভুয়া দলিল তৈরি এবং বিক্রির চেষ্টাও চালিয়ে যাচ্ছেন।
জানা যায়, চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক ওই জমির অবৈধ দখল উচ্ছেছদ করে সমিতিকে বুঝিয়ে দিতে একাধিকবার আদেশ দেয়ার পরও ‘রহস্যজনক’ কারণে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করেননি। ২০১৩ সালে সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ফারুক আহম্মদ অবৈধ দখলদার এবং স্থাপনা উচ্ছেদ করলেও জমিটি তিনি সরকারের কোনও প্রতিনিধিকে ভুঝিয়ে না দিয়ে রহস্যজনক কারণে তিনি জমির দখল বুঝিয়ে দেন জুনাব আলী, আওয়ামী লীগ নেতা ও ক্রীড়া সংগঠক দিদারুল আলম চৌধুরী, মো. নেছার উদ্দিন দুলুসহ আরও কয়েকজনকে। ফলে সমিতিকে বন্দোবস্তি দেয়া সরকারের ওই জমি ফিরে পাওয়া নিয়ে চরম অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

অভিযোগ আছে, সরকরি সম্পদ আত্মসাত ‘জায়েজ’ করতে সংগঠনের গঠনতন্ত্র ও সমবায় আইন উপেক্ষা করে তৎকালীন আরডিসি ও এনডিসি এবং জুনাব আলীকে সমিতির সদস্য হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করা হয়। এরপর থেকে জুনাব আলী কখনো সমিতির চেয়ারম্যান আবার কখনও সমিতির সেক্রেটারি সেজে গোপনে সমিতির ১৮জন সদস্যদের নামে নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে একের পর এক ‘বায়নানামা’ দলিল তৈরি করে নেন। জমি বিক্রির জন্য পত্রিকায় কথিত দরপত্র আহ্বান করেন সমিতির সাবেক সেক্রেটারি ফখরুল ইসলাম ভূঁইয়াসহ ওই চক্র। তবে তাদের এ প্রচেষ্টা ভেস্তে যায়।
এদিকে ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকান্ড এবং সংগঠনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে জুনাব আলীকে সমিতির সাধারণ সভায় কড়া সতর্ক করা হয়। ২০২০ সালের ২৬ জানুয়ারি সমিতির সদস্য পদ থেকে বহিষ্কারও করা হয় এই জুনাব আলীকে। বন্দোবস্তি দলিলের ১১ নং শর্ত মতে, জেলা প্রশাসক এবং সমিতির পূর্ব-অনুমতি ব্যতীত সমিতির সদস্য বা অপর ব্যক্তির কাছে বিক্রি কিংবা হস্তান্তরে নিষেধ রয়েছে।
চট্টগ্রামের তৎকালীন আরডিসি মোহাম্মদ এয়াকুব আলী ও চট্টগ্রাম জেলার সাবেক এনডিসি মোহাম্মদ আবুল হোসেনের সাথে যোগাযোগে মোবাইলে একাধিকবার কল করেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।
সমিতির বর্তমান সেক্রেটারি মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরীর অভিযোগ, সমবায় সমিতির অডিট প্রতিবেদনেও জুনাব আলীসহ অন্যদের বিরুদ্ধে সমিতির অর্থ ও সম্পত্তি আত্মসাতের চিত্র উঠে আসে। এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে ২০১৫ সালের ৭মে ও ২০১৯ সালের ১৮ জুন সমিতির অডিট আপত্তি ও বেহাত হওয়া সম্পত্তি উদ্ধারের বিষয়ে শুনানি গ্রহণ করেন চট্টগ্রাম জেলা সমবায় অফিসার শেখ কামাল হোসেন। রহস্যজনক কারণে শত কোটি টাকার এ সম্পত্তি উদ্ধারসহ সমিতির অর্থ আত্মসাতের বিষয়ে আইনানুগ কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেননি শেখ কামাল হোসেন।
ভূমি জবর দখল, ভূমি বন্দোবস্তির শর্তভঙ্গ করে অবৈধ বায়নানামা দলিল তৈরি ও অবৈধভাবে সমিতির সদস্য হওয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জুনাব আলী বলেন, ‘আপনাদের (প্রতিবেদক) কি সমস্যা ? এগুলো নিয়ে আপনারা কেন মাতামাতি করছেন? সরকার জনগণকে জায়গা রেজিস্ট্রি করে দিয়েছে ৫০বছর আগে। এখন কেন এগুলো নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছেন। আপনারা পত্রিকায় যা ইচ্ছা তা লিখে দেন।’ সমিতির সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ প্রসঙ্গে জুনাব আলী বলেন, ‘এটা ভূল। সমিতির ২০জন সদস্য আমাকে বায়নানামা দলিল দিয়েছেন। ৬জন সদস্য মারা গেছেন। আর অবশিষ্ট্য ৩জন আমাকে বায়নানামা দলিল না দিয়ে বিভিন্নভাবে ঝামেলা পাকাচ্ছেন। একই অভিযোগ প্রসঙ্গে দিদারুল আলম চৌধুরী বলেন, বাংলাবাজার ডেবারপাড়ে

Please Share This Post in Your Social Media

More News Of This Category